ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভ চলাকালে ঢাকাসহ সারাদেশে এক হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।
শুক্রবার (১৬ আগস্ট) এক সংবাদ মাধ্যমকে টেলিফোনে দেওয়া ৪৫ মিনিটের একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ঢাকার কিছু জায়গায় এবং অন্যান্য জেলায়- বেশিরভাগই ছাত্র ও তরুণ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুলিশ বাহিনী তাদের মারধর করেছে বা গুলি করে হত্যা করেছে।
ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা ১৫ আগস্ট নর্থইস্ট নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এবং জেলা পর্যায়ের নেতাদের ওপর প্রথম মনোনিবেশ করেছে, যারা ভারত এবং অন্যান্য দেশে পালিয়ে গেছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
পুলিশের শীর্ষ সূত্রগুলো জানিয়েছে, ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পর্যায়ক্রমে জেলা পর্যায়ের নেতাদের খুঁজে বের করার নির্দেশ দিয়েছে। বিশেষ করে তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদকে তারা খুঁজে বের করতে আগ্রহী।
সূত্র বলেন, আগে ধারণা করা হচ্ছিল- হাসান মাহমুদকে সেনাবাহিনী আটক করেছে। এখনো তার সন্ধান মেলেনি। সে কোথায় লুকিয়ে আছে, আমরা জায়গাটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। আওয়ামী লীগ সরকারের অর্ধেক নেতাকে খুঁজে বের করা হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত ৫ আগস্ট নয়াদিল্লির উদ্দেশে ঢাকা ছেড়ে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। তাকে `স্বৈরাচারী শাসনের নেতৃত্ব দানকারী` আখ্যায়িত করে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, তার (হাসিনার) মন্ত্রিসভার কয়েকজন মন্ত্রী, বিশেষ করে আসাদুজ্জামান খান কামাল, আনিসুল হক এবং ওবায়দুল কাদের ছাড়াও ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা রয়েছেন- যারা এই কিলিং মেশিনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে আসাদুজ্জামান খান কামাল ২ হাজার কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন সাখাওয়াত হোসেন। সেই সঙ্গে তিনি আওয়ামী লীগের দুর্নীতির তদন্ত ত্বরান্বিত করতে দুদককে নির্দেশ দিয়েছেন।
১৯৪৫ পরবর্তী জার্মানিতে ঘটে যাওয়া ‘নুরেমবার্গ ট্রায়ালের’ মতোই তদন্ত হবে উল্লেখ করে হোসেন বলেন, এরপর একটি সর্বজনীন আদেশ জারি করা হবে, যা বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ড, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ব্যাপক তদন্ত শুরু করবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বিপুলসংখ্যক পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন উল্লেখ করে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, তাদের শান্ত করতে আমার টানা পাঁচ ঘণ্টা আলোচনা হয়েছে। আমি তাদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, হাসিনা সরকারের আমলে তারা কাকে হত্যা করেছে? কার নির্দেশে হত্যা করেছে? অফিসারদের অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। তারা আমার পা ছুঁয়ে, আমাকে জড়িয়ে ধরে অনুশোচনার ভঙ্গিতে ক্ষমা চেয়েছেন।
পুলিশ বাহিনীকে কীভাবে পরিচালনা করা হবে, সে বিষয়ে ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার সুচিন্তিত দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করবে। উপদেষ্টা হোসেনের মতে, বেশ কিছু অফিসারকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই কর্মকর্তারা মাদক ব্যবসায় লিপ্ত এবং বদলি-পোস্টিং চালিয়ে বিপুল অর্থ উপার্জন করতো। তদন্ত শেষ হলে তাদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।
ইউনূসের নেতৃত্বাধীন শাসন ‘অদৃশ্য ষড়যন্ত্রকারী ও শত্রু দ্বারা পরিবেষ্টিত’ উল্লেখ করে হোসেন বলেন, ভারতীয় সরকারের প্রতি তার বার্তা হলো- আপনারা কি ঢাকায় একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সরকার চান নাকি শত্রুমনা সরকার চান? যে দেশ পরাশক্তি হতে চায়, তাকে বাংলাদেশের মতো প্রতিবেশী দেশের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়। আমরা কেউ টুকরে টুকরে গ্যাং নই।