বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে চালানো গণহত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধের বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল যেন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে করতে পারে, সেজন্য জনগণকে তথ্য-প্রমাণ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম।
আজ রবিবার ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতদের দেখতে এসে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আপনারা ইতোমধ্যে জানেন, আন্তর্জাতিক প্রসিকিউটর টিম আমরা আজকে প্রথম দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। একজন চিফ প্রসিকিউটর ও চারজন প্রসিকিউটর নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমরা তিনজন আজ জয়েন্ট করেছি। আমাদের প্রথম চ্যালেঞ্জটাই ছিল এই মামলা, গণহত্যার যে অভিযোগ, সেই অভিযোগের পক্ষে তথ্য-প্রমাণ রয়েছে, গণহত্যার যেসব তথ্য-প্রমাণ আছে—এগুলোকে সংরক্ষণ করা। এগুলো কালেকশন করে একসঙ্গে করে মামলার উপযুক্ত করা। সে কাজটা আমরা আজ থেকে শুরু করলাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের একটা তদন্ত সংস্থা রয়েছে। এত দিন এটা ফাংশনাল ছিল না। আমরা যেহেতু আজকে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছি, তাই প্রথমেই শুরু করেছি ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে দেখা। এখানে যারা অবশিষ্ট এখনো চিকিৎসাধীন আছেন, তাদের কী অবস্থা।’
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘বুঝতেই পারছেন এত দিন পরও যারা চিকিৎসাধীন আছেন, তাদের অবস্থা কতটা ভয়াবহ। অনেককে দেখলাম গুলি বুকে লেগে পেছন দিয়ে বের হয়ে গিয়েছে। কোমড়ে লেগে, একদিক দিয়ে ঢুকে আরেকদিক দিয়ে বের হয়ে গেছে। ভাগ্যক্রমে বেঁচে আছেন। একজন শিশু আছে ক্লাস সিক্সে পড়ে, যার দুই পায়ে গুলি লেগেছে, দুটা পায়েই মাংস চলে গেছে। খুব বীভৎস।’
তাজুল ইসলাম বলেন, ‘একটা রাষ্ট্রের বাহিনী একটা ছোট বাচ্চা, নিরস্ত্র ছোট মানুষের ওপরে একটা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে এভাবে গুলি করে মানুষ মারতে পারে—এটা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা মুশকিল। যে অপরাধ বাংলাদেশে হয়েছে, আমাদের সেই সরকার এবং যারা এই অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল, তারা এটা করেছে। তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।’
আহতদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা দেখলাম তাদের অবস্থা। আমাদের তদন্ত সংস্থা তাদের বক্তব্য নিয়েছে। তারা বলেছে, ঘটনাগুলো কীভাবে ঘটেছে, কতটুকু ক্ষতি হয়েছে, কীভাবে গুলি লেগেছে, কারা গুলি করেছে। এই তথ্যগুলো কম্পাইল করছেন। সেই কাজটা আমরা শুরু করেছি। এটা চলতে থাকবে। আমরা দেশবাসীর কাছে আহ্বান জানাব, যারা যেখানে এই আন্দোলনের সময় পুলিশের দ্বারা, এই রাস্ট্রের দ্বারা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, আহত হয়েছেন, শহীদ হয়েছেন—সবাই আমাদের এই তদন্ত সংস্থাকে তথ্য-প্রমাণ দিয়ে সাহায্য করুন। বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর বিচার যাতে আমরা করতে পারি, সে ব্যাপারে জনগণ যেভাবে দেশটাকে স্বাধীন করার জন্য এগিয়ে এসেছেন, এই একই জনগণকে আমরা অনুরোধ করছি তথ্য-প্রমাণ দিয়ে আমাদের সাহায্য করুন। যাতে আমাদের আদালত, আমাদের তদন্ত সংস্থার মধ্যে দিয়ে আমরা ন্যায়বিচার করতে পারি।’