দেশবার্তা

শেরপুরে পাহাড়ি ঢলে লখো মানুষ পানিবন্দী, ৩ জনের মৃত্যু

টানা ভারি বর্ষণের ফলে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সীমান্তবর্তী জেলা শেরপুরের সবকটা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে জেলার নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতির অন্তত ১৫টি ইউনিয়ন। পানিবন্দী অবস্থায় দুর্ভোগে পড়েছেন লাখো মানুষ।

এদিকে, বন্যার পানিতে ডুবে নালিতাবাড়ীতে খলিসাকুড়া গ্রামের ইদ্রিস আলী ও বাঘবেড় বালুরচর গ্রামের ওমিজা বেগমসহ ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে দুজনের পরিচয় মিললেও একজনের পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছেন একজন।

সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে বন্যায় আটকে পড়াদের উদ্ধারে অভিযান চললেও পানির প্রবল স্রোত আর পর্যাপ্ত নৌযানের অভাবে ব্যহত হচ্ছে উদ্ধারকাজ।

শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জেলার পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদেও পানি বিপৎসীমার ৬২০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে এবং ভোগাই নদীর নাকুগাঁও পয়েন্টে পানি ১ সেন্টিমিটার ও নালিতাবাড়ী পয়েন্টে ৫৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানির তীব্র স্রোতে অপর পাহাড়ি নদী চেল্লাখালীর ওয়াটার গেজ ওঠে যাওয়ায় এখানকার পরিমাপ জানা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়াও অপর দুটি পাহাড়ি নদী মহারশি ও সোমেশ্বরীর পানি এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এসব নদীর পানি কিছুটা কমলেও থেমে থেমে ভারি বর্ষণের ফলে তেমন উন্নতি হচ্ছে না।

অন্যদিকে, এসব নদ-নদীর পানি ভাটি অঞ্চলে গিয়ে বন্যার তীব্রতা বাড়িয়েছে। গত শুক্রবার রাত থেকে প্লবিত হয়েছে নতুন নতুন এলাকা। এসব এলাকার অধিকাংশ মানুষ আশ্রয় নিয়েছে ঘরের চালে, সিলিংয়ে ও মাচায়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নালিতাবাড়ীর ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীর বিভিন্ন স্থানের বাঁধে ব্যাপক ভাঙন হয়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে শেরপুর-নালিতাবাড়ী ভায়া গাজির খামার সড়ক, শেরপুর-নালিতাবাড়ী ভায়া তিনআনী সড়ক, নালিতাবাড়ী-নাকুগাঁও স্থলবন্দর সড়কসহ জেলার প্রধান গুরুত্বপূর্ণ অন্তত ১০টি সড়ক। বিধ্বস্ত হয়েছে অসংখ্য গ্রামীণ পাকা ও কাঁচাসড়ক। ভেসে গেছে এসব এলাকার সব পুকুরের মাছ, গবাদি পশু। নষ্ট হয়ে গেছে উঠতি আমনের ক্ষেত। বিভিন্ন স্থানে বানের পানিতে ধসে ও ভেসে গেছে কাঁচা ঘরবাড়ি। পানিতে ভাসছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্র। এসব এলাকায় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কিছু আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হলেও তা অপর্যাপ্ত এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় অনেকে আসতে পারছেন না।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আজ শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত বৃষ্টির পরিমাণ রেকর্ড করা হয়েছে শেরপুরে ৩৭ মিলিমিটার এবং নালিতাবাড়ীর দুটি পয়েন্টে ১৭০ ও ১০০ মিলিমিটার।