জাতীয়

চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে মাছ, মাংস ও সবজি

বাজারে বেশির ভাগ শাকসবজি এখনো উচ্চ দরেই বিক্রি হচ্ছে। তবে সরবরাহ বাড়ায় ফার্মের মুরগির ডিমের দাম কিছুটা কমলেও অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে মুরগির দাম। আগের সপ্তাহের মতো চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে মাছ।

এদিকে চলতি সপ্তাহে তেল ও চিনিতে শুল্কছাড় দিয়েছে নতুন সরকার। কয়েকজন খুচরা ব্যবসায়ী জানান, শুল্ক কমানোর খবরে পাইকাররা তেল ও চিনির দরে কিছুটা ছাড় দিচ্ছে। তবে ভোক্তারা শুল্কছাড়ের সুফল পেতে কিছু দিন সময় লাগবে।

আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে।

বাজারে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ডিমের দামে অতিষ্ঠ ছিল সাধারণ ক্রেতারা। বিশেষ করে চলতি সপ্তাহে প্রতি ডজন ডিমের দাম ১৮০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। তবে এ দাম এখন বড়বাজারে ১৫০ টাকায় নেমেছে। যদিও পাড়া-মহল্লায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে কেউ কেউ এখনো ডিম বিক্রি করছেন ১৭০ টাকায়। সরকার এরমধ্যে ডিমের শুল্কছাড়, আমদানির অনুমতি এবং বেঁধে দেওয়া দামে ডিম বিক্রি করতে ব্যবসায়ীদের কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে। যার সুফল মিলছে বলে জানিয়েছেন খুচরা বিক্রেতারা।

এদিকে সবজি বিক্রেতারা জানান, বাজারে চাহিদার তুলনায় সবজির সরবরাহ এখনো কম। গত কয়েক মাসে দেশে বন্যা-বৃষ্টির কারণে ফসলের অনেক ক্ষতি হয়েছে। এ কারণে সবজির দাম শিগগিরই কমছে না।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহের দামেই বিক্রি হচ্ছে বেশির ভাগ সবজি। গ্রীষ্মকালীন সবজি কচুরমুখীর কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, বেগুন প্রতি কেজি ১২০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে করলার কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, কাঁকরোল ১২০ টাকা, পটল ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ঢেঁড়স ১০০ টাকা ও বরবটি ১৪০ টাকা।

প্রতিটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ১০০ টাকায়। পেঁপের কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ধুন্দুল ১০০ টাকা, চিচিঙ্গা ১০০ টাকা, কচুর লতি ১০০ থেকে ১২০ টাকা, ঝিঙা ১২০ টাকা, শসা ৮০ থেকে ১২০ টাকা ও কাঁচামরিচ ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারগুলোতে শীতকালীন সবজি শিমের কেজি ৪৮০ টাকা, ফুলকপি প্রতিটি ৬০ থেকে ৮০ টাকা, ছোট আকারের বাঁধাকপি ৮০ টাকা, পাকা টমেটোর কেজি প্রকারভেদে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, গাজর ১৮০ টাকা ও মুলা ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লেবুর হালি ৩০ থেকে ৬০ টাকা। ধনে পাতার কেজি ৬০০ টাকা, কাঁচা কলার হালি ৮০ টাকা, চালকুমড়া প্রতিটি ৮০ টাকা। বাজারে মিষ্টিকুমড়ার কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা।

লাল শাকের আঁটি ২৫ টাকা, লাউ শাক ৫০ টাকা, মুলা শাক ২৫ টাকা, কলমি শাক ২০ টাকা, পুঁই শাক ৪০ টাকা এবং ডাঁটা শাক ৩০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। বাজারগুলোতে সপ্তাহ ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজ কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ১২৫ টাকা, আদা ৩২০ টাকা, রসুন ২৪০ টাকা, নতুন আলু ১২০ টাকা, বগুড়ার আলু ১০০ টাকা ও পুরোনো আলু ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

গত সপ্তাহের মতো চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের মুরগি। ব্রয়লার মুরগির কেজি ২০০ থেকে ২১০ টাকা। সোনালি মুরগির কেজি ১০ টাকা বেড়ে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালি হাইব্রিডের কেজি ২৭০ টাকা, দেশি মুরগি ৫২০ টাকা, লেয়ার লাল মুরগি ৩৩০ টাকা ও সাদা লেয়ার ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে গরুর মাংসের কেজি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, গরুর কলিজা ৮০০ টাকা, গরুর মাথার মাংস ৫৫০ টাকা, গরুর বট ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা ও খাসির মাংসের কেজি এক হাজার ১৫০ টাকা থেকে এক হাজার ২০০ টাকা।

বাজারে চাষের শিংয়ের কেজি (আকারভেদে) ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, রুইয়ের দাম কেজিতে বেড়ে (আকারভেদে) ৩৮০ থেকে ৫০০ টাকা, দেশি মাগুর ৮০০ থেকে এক হাজার ১০০ টাকা, মৃগেল ৩২০ থেকে ৪০০ টাকা, পাঙাশ ২০০ থেকে ২২০ টাকা, চিংড়ি ৭০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায়, বোয়াল ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাতল ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, পোয়া ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, কই ২২০ থেকে ২৩০ টাকা, মলা ৫৫০ টাকা, বাতাসি টেংরা এক হাজার ৩০০ টাকা, টেংরা ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি ৫০০ টাকা, পাঁচমিশালি ২২০ টাকা, রূপচাঁদা ১ হাজার ২০০ টাকা, বাইম ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা, দেশি কই এক হাজার ২০০ টাকা, শোল ৬০০ থেকে ৯০০ টাকা, আইড় ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা, বেলে ৮০০ টাকা ও কাইক্ক্যা ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর মগবাজার, কারওয়ান বাজার, শেওড়াপাড়া, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ও টাউন হল বাজার ঘুরে এবং বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

মগবাজারের মুরগি বিক্রেতা রফিক বলেন, ‘হঠাৎ করেই সরবরাহ কমিয়ে মুরগির দাম বাড়িয়ে দিয়েছে পাইকাররা। তারা জানিয়েছে বন্যা ও বৃষ্টির কারণে মুরগির সরবরাহ কম।’

সম্প্রতি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধানে গবেষণা পরিচালনা করেছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)।

জরিপে দেখা যায়, অদক্ষ বাজার ব্যবস্থা পণ্যমূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। এ ছাড়া পণ্য উৎপাদন ও পরিবহন খরচ বৃদ্ধি, বাজার আধিপত্য প্রভৃতি কারণে স্থানীয় বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে। কৃত্রিম সংকট, ঋণপত্র খোলায় বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা, টাকার মূল্যমান হ্রাস, সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থায় অদক্ষতা প্রভৃতি বিষয় পণ্যমূল্য ওঠানামায় ভূমিকা রাখছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা চেম্বার ‘খাদ্য মূল্যস্ফীতি; নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য নির্ধারণে গতি-প্রকৃতি বিশ্লেষণ’ শীর্ষক এক সেমিনারে চেম্বারের সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, ‘উৎপাদক থেকে ভোক্তা পর্যায়ে দাম বাড়লেও উৎপাদকরা ন্যায্য মূল্য পান না। কখনও কখনও দাম বাড়ানোর জন্য পরোক্ষ খরচ জড়িত হয়। স্টোরেজ, পরিবহন এবং পণ্য প্রক্রিয়াকরণ পর্যায়ে খরচ কমাতে পারলে দাম তুলনামূলকভাবে কমে।’

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ড. সায়েরা ইউনুস বলেন, ‘শুধু মুদ্রানীতি দিয়ে পণ্যের দাম কমানো সম্ভব নয়। এ জন্য সরকারকে প্রান্তিক পর্যায়ে পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।’