দক্ষিণ কোরিয়ার ডাংসান গ্রামের বাসিন্দারা উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে তাদের দেশের বৈরিতার খেসারত বয়ে বেড়াচ্ছেন। পিয়ংইয়ং সিউলের সাথে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের একটি নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করেছে: লাউডস্পিকার। নিউইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তর কোরিয়ার দিক থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার দিকে বসানো লাউড স্পিকারে ভেসে আসছে আশ্চর্য ভয়ানক সব শব্দ! কীরকম শব্দ? এতে কিন্তু বৈচিত্র রয়েছে। কখনও একযোগে চিৎকার করে চলেছে ভূতেরা। কখনও বা ডেকে চলেছে অসংখ্য নেকড়ে। সেই সঙ্গে বিকট ধাতব শব্দ। কিংবা কোনও ভাঙা পিয়ানো বাজানোর মতো শব্দ ভেসে আসছে সহ্যের অতিরিক্ত বেগে। অ্যান মি-হি নামে একজন ৩৭ বছর বয়সী বাসিন্দা নিউ ইয়র্ক টাইমস-কে বলেছেন, ‘এই শব্দ আমাদের পাগল করে তুলছে। আপনি রাতে ঘুমাতে পারবেন না।’
১৯৫০-৫৩ সালে যুদ্ধের পর উভয় কোরিয়াই শান্তি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি। উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং উন বছরের পর বছর ধরে সিউল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সমস্ত সংলাপ বন্ধ করে দিয়েছেন। পারমাণবিক সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাকে দ্বিগুণ করে কড়া অবস্থান গ্রহণ করেছেন। বিপরীতে উত্তর কোরিয়ায় তথ্যের সীমাবদ্ধতাকে ক্ষুণ্ন করতে ‘স্বাধীনতার ধারণা ছড়িয়ে দেওয়ার’ আহ্বান জানিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার শাসক ইউক ইওল। ডাংসান গ্রামের জনসংখ্যা ৩৫৪ জন এবং বেশিরভাগ বাসিন্দার বয়স ৬০ বা তার বেশি। তাদের কাছে এই বিকট শব্দ বোমাবর্ষণের মতো শোনাচ্ছে।
বাসিন্দারা বলছেন, ‘সবচেয়ে খারাপ দিকটি হল আমরা জানি না এটি কখন শেষ হবে, আদৌ কখনও শেষ হবে কিনা’। কেবল সরাসরি যুদ্ধই নয়, নানাভাবে কিম উত্ত্যক্ত করতে চেয়েছেন প্রতিবেশী দেশকে। গত মে মাসে আবর্জনা ভর্তি বেলুন সীমান্তের অন্য প্রান্তে পাঠাচ্ছিল কিমের সেনা। জবাবে লাউডস্পিকারে দক্ষিণ কোরিয়া পপ গান বাজাচ্ছিল বলে শোনা গিয়েছিল। আর তার পর শুরু হয়েছে কিমের এহেন শব্দদানবের ‘অত্যাচার’। নিউ ইয়র্ক টাইমসের রিপোর্ট অনুসারে, উত্তর কোরিয়ার দিক থেকে আসা এই বিকট আওয়াজ কমাতে গ্রামবাসীরা এখন তাদের জানালা বন্ধ করে রাখছে। শিশুরা আওয়াজের কারণে বাইরে খেলা বন্ধ করে দিয়েছে। রাজনৈতিক নেতারা তাদের সমবেদনা জানাতে সীমান্ত গ্রাম পরিদর্শন করেছেন। কোরিয়া ইনস্টিটিউটের কোহ বলেছেন, ‘সমাধান হলো দুই কোরিয়াকে তাদের পুরনো চুক্তিতে পুনরায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করা, যাতে একে অপরকে অপবাদ দেয়া বন্ধ হয়’।
গত মাসে, উত্তর কোরিয়া ডিনামাইট দিয়ে দুই কোরিয়ার মধ্যে সমস্ত রেল ও সড়ক যোগাযোগ ভেঙে দিয়েছে।
সূত্র : হিন্দুস্থান টাইমস