মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী এম সারাভানান আজ বৃহস্পতিবার (২ জুন) ঢাকায় একটি জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্বে রয়েছেন প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমেদ। মন্ত্রীর এক দিনের সফরকে ঘিরে কলিং ভিসার বিষয়ে প্রত্যাশা, প্রাপ্তি, ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে ঢাকায়।
দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা শ্রমবাজারের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত দিতে মন্ত্রী এম সারাভানান এখন ঢাকায়।
ইতোমধ্যে বাংলাদেশের কিছু রিক্রুটিং এজেন্সি হুমকি দিয়ে বলেছে, যদি সিন্ডিকেট করা হয় তাহলে তারা কাফনের কাপড় পড়ে এর প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ করবেন। এ খবর মালয়েশিয়ার গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর গতকাল বুধবার বিকেলে ঢাকায় আসার আগে এম সারাভানান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, যদি ঢাকায় তার বিরুদ্ধে কোনো বিক্ষোভ করা হয়, তাহলে বাংলাদেশের আরো রিক্রুটিং এজেন্সি নিষিদ্ধ করা হবে।
কিন্তু এসব বাক-বিতণ্ডার পেছনের প্রকৃত বাস্তবতা হচ্ছে, মালয়েশিয়ায় শ্রমিক সংকটে পাম তেল উৎপাদন বিগত সময়ের তুলনায় সর্বনিম্ন প্রায় তিন ভাগের মধ্যে এক ভাগে নেমে গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এ অচলাবস্থা দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকলে মালয়েশিয়ার ঐতিহ্যের ধারক পাম শিল্পের অস্তিত্ব বিলীন হবে। দেশটির অর্থনীতিতে দুটি বৃহত্তর সেক্টর পাম শিল্প ও নির্মাণ শিল্প পরিচালিত হয় শুধুমাত্র বাংলাদেশী এবং ইন্দোনেশিয়ার শ্রমিক দিয়ে। কিন্তু ইতোমধ্যে ইন্দোনেশিয়া এসব খাতে শ্রমিক না পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে। তাই এম সারাভানানের কাছে কলিং ভিসা চালু করে বাংলাদেশী শ্রমিক নিয়োগ ছাড়া তার কাছে আর কোনো বিকল্প নেই।
এদিকে মহামারীর ক্ষতি এবং সমানতালে চলছে দেশটিতে শ্রমিক নির্যাতন ও অব্যবস্থাপনা। শ্রমিক নির্যাতনে যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে মালয়েশিয়ার ছয়টি কোম্পানির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যারা আমেরিকায় পণ্য রফতানি করে। যুক্তরাষ্ট্র যথাযথ তদন্ত করে এর সত্যতা পেয়ে নিষেধাজ্ঞা দিলেও মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী এম সারাভানান শ্রমিক নির্যাতনের কথা বার বার অস্বীকার করেছেন।
ইন্দোনেশিয়ার পরে যদি বাংলাদেশ থেকেও কর্মী নিতে ব্যর্থ হয় তাহলে পাম ও নির্মাণ সেক্টর নিয়ে বেকায়দায় পড়ে যাবে মালয়েশিয়ান সরকার। এই ব্যর্থতার জন্য তীব্র সমালোচনার মুখে পড়বেন ভারতীয় তামিল বংশোদ্ভূত এম সারাভানান।
ইতোমধ্যে কলিং ইস্যুতে নিজ দেশেই বহুবার সমালোচনায় পড়েছেন তিনি, তবুও কোনোকিছুরই পাত্তা দিচ্ছেন না। এজন্য নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে গেলে মালয়েশিয়া, বাংলাদেশ উভয়ের জন্য এই শ্রমবাজার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক নিয়মে কলিং খোলা হলে প্রায় পাঁচ লাখ বাংলাদেশী বেকার যুবকের মালয়েশিয়ার বিভিন্ন সেক্টরে কর্মসংস্থান হবে বলে দেশটির এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে। যেভাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বৈদেশিক রেমিট্যান্স আধিপত্য বিস্তার করছে এই অবস্থায় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খুলে দেয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।
গত বছরের ডিসেম্বরে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশী শ্রমিক পাঠানোর ব্যাপারে দুই দেশের একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়। যে চুক্তির মেয়াদ রয়েছে আগামী ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। চলতি বছর শুরুর দিকে এম সারাভানান বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে জানান, বাংলাদেশের সব রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য শ্রমবাজার উন্মুক্ত করা হবে না। বাংলাদেশ ২৫টি
নির্বাচিত রিক্রুটিং এজেন্সি ও দুই শ‘ ৫০টি সাব এজেন্টের মাধ্যমেই মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে পারবে। তবে মন্ত্রী চিঠির জবাবে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা আইন এবং আইএলও কনভেনশন অনুযায়ী তা সম্ভব নয়।
এম সারাভানানের প্রস্তাবিত ২৫ ও দুই শ‘ ৫০ সিন্ডিকেটে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর সিদ্ধান্ত যে বাংলাদেশের জন্য আত্মঘাতী হবে তা সরকার ও জনগণ অবগত। কারণ সিন্ডিকেটে কর্মী নিয়োগে আগে যেমন প্রত্যেক কর্মীর কাছ থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা বাধ্যতামূলক আদায় করা হয়েছে। ঠিক এবারো সিন্ডিকেট হলে প্রত্যেক কর্মীর কাছ থেকে পাঁচ লাখেরও বেশি আদায় করা হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর এই টাকা মালয়েশিয়ায় এসে চার বছরেও বৈধভাবে কাজ করে উসুল করা প্রায় অসম্ভব।