বিনোদন

মিলে যাওয়া মোহনায়

জেনিফার লোপেজ- যাঁর উষ্ণ অবতার আন্দোলিত করে তোলে অনুরাগীদের মন। আবেগ, উদ্যম এবং প্রেরণার ভরপুর মিশেলে গাওয়া গানগুলো আর পর্দা কাঁপানো অভিনয় সব শ্রেণির মানুষের হৃদয়ে গেঁথে যায়। তখন নতুন শতাব্দীর আগমনী বার্তা চারদিকে। বিশ্বের সব প্রান্তের মানুষই প্রস্তুত হচ্ছেন নতুন শতাব্দী বরণের। ঠিক সে সময়ই হলিউডের দেয়ালে মিউজিকের ছন্দে ভেসে উঠল ‘ওয়েটিং ফর টু নাইট’। শোরগোল পড়ে গেল বিশ্বব্যাপী, উদ্বেলিত হলেন সংগীতপ্রেমীরা। নতুন শতাব্দী বরণে বিশ্বের সব প্রান্তে যোগ হলো গানটি। গানটি তো তুমুল জনপ্রিয় হয়ই, জেনিফার লোপেজও নিজেকে নিয়ে যান জনপ্রিয়তার চূড়ায়। অন্যদিকে বিখ্যাত আমেরিকান অভিনেতা বেন অ্যাফ্লেক। সেই ১৯৯২ সালে ‘স্কুল টাইস’ দিয়ে যার শুরু। পরে ‘শেক্সপিয়র ইন লাভ’, ‘আরমাগাডন’, ‘পার্ল হারবার’, ‘ডেয়ারডেভিল’-এর মতো ভুবনকাঁপানো সিনেমা করে বিশ্বখ্যাত হয়ে ওঠেন অ্যাফ্লেক। এ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন, যার ভেতর ২৫টিরও বেশি বক্স অফিসে ঝড় তুলে গড়েছে রেকর্ডের পর রেকর্ড।
এক সময় বিনোদন জগতের এ দুই মহারথী নিজেদের মধ্যে গড়ে তোলেন বন্ধুত্ব। সেই বন্ধুত্ব গড়ায় গভীর প্রেমে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০২ সালে তাঁরা আংটি বদল করেন। সেই সময় বিশ্বজুড়ে তাঁদের ডাকা হতো ‘বেনিফার’ বলে। অবশ্য এক বছর পরই তাঁদের মধ্যে দেখা দেয় মতপার্থক্য, যার ফলে উভয়েই হাঁটেন বিচ্ছেদের পথে। বিচ্ছেদ হয়েছে ২০ বছর আগে। সম্পর্ক থাকার সময় কখনও তা মধুর ছিল, আবার কখনও সেখানে এসেছে তিক্ততা। ছাড়াছাড়িও হয়েছে। কিন্তু এসবের পরেও একে অপরের ভালোবাসার টানে এক হলেন হলিউডের এই তারকা জুটি। গত বছর নিজেদের মধ্যে মনোমালিন্য মিটিয়ে ফের সম্পর্কে জড়ান তাঁরা। অবশেষে লাস ভেগাসে ৫২ বছর বয়সী জেনিফার লোপেজ ও ৪৯ বছরের বেন অ্যাফ্লেক বিয়ে সারলেন। হলিউড তারকা জেনিফার বিয়ের খবর নিশ্চিত করেছেন তাঁর ওয়েবসাইটে। ব্যক্তিগত পরিসরে হওয়া বিয়ের কিছু ছবিও শেয়ার করেছেন তিনি। উচ্ছ্বসিত জেনিফার বিয়ে সম্পর্কে কিছুটা কৌতুক করে বলেন, তিনি ও অ্যাফ্লেক লাস ভেগাসে পালিয়ে আসেন এবং ১৬ জুলাই লাস ভেগাসের একটি চ্যাপেলে বিয়ের শপথ নেন। যুক্তরাষ্ট্রের আইন মেনে বিয়ের পরপরই নিজের পদবি পরিবর্তন করেছেন জেনিফার। লোপেজের পরিবর্তে নামের শেষ অংশে তিনি ব্যবহার করছেন অ্যাফ্লেক। অর্থাৎ জেনিফার অ্যাফ্লেক।

২০০১ সালের প্রথম দিকে ‘গিগলি’ সিনেমার সেটে দু’জনের দেখা হয়। সেই থেকে প্রেম, যা অল্প সময়ের মধ্যেই প্রকাশ্যে চলে আসে। দর্শকও বেশ পছন্দ করতেন এই তারকা যুগলকে। নানা ঘাত-প্রতিঘাত এসেছে এই সম্পর্কে। এরপর বিচ্ছেদ। পরে দু’জনই আলাদাভাবে নতুন করে সম্পর্ক গড়েন অন্যের সঙ্গে। বেনের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর বহু দিনের বন্ধু মার্ক অ্যান্টনির সঙ্গে চুটিয়ে ডেট করেন জেনিফার। অন্যদিকে, জেনিফার গার্নারের সঙ্গে সংসার পাতেন বেন। দু’জনেরই তিনটি করে সন্তান রয়েছে। জেনিফার গার্নারের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর অ্যানা দে আর্মাসের প্রেমে পড়েছিলেন বেন অ্যাফ্লেক। জেনিফার ততদিনে আবার বেসবল তারকা অ্যালেক্স রদ্রিগেজের প্রেমিকা। কিন্তু ২০১৯ সালে সেই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসেন জেনিফার। ততদিনে গার্নারের সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে আবারও সিঙ্গেল হয়ে যান বেন। এর থেকে দু’জনের মনেই আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে পুরোনো প্রেম। অবশ্য বিচ্ছেদ হলেও গত কুড়ি বছর ধরেই দু’জনের মধ্যে সম্পর্ক ছিল। কার্যত গত বছর থেকে এই দম্পতিকে নিয়ে ব্যাপক গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত সব গুঞ্জন সত্যি করে নিজেদের হাতগুলো এক করলেন তাঁরা। স্বাভাবিকভাবেই হলিউডের দুই বিখ্যাত তারকার এই বিয়ে ব্যাপক সাড়া ফেলে।
বিয়ের পর জেনিফার তাঁর হাতের আংটি দেখিয়ে একটি ছবি পোস্ট করেছেন বিছানা থেকে। যেখানে তিনি নিজেই জানিয়েছেন যে, তিনি বিবাহিত এবং তাঁর আঙুলে রয়েছে বিয়ের আংটি। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থার পক্ষ থেকে বেন ও জেনিফারের ছবি এবং ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে। জেনিফারের হেয়ার স্টাইলিশ ক্রিস আপোলটাউন নায়িকার বিয়ের একটি ভিডিও প্রকাশ করেন। যেখানে সাদা গাউন পরা ব্রাইডাল লুকে ধরা দেন জনপ্রিয় পপ তারকা। সেই ভিডিওতেই ক্রিস জেনিফারকে জিজ্ঞেস করেন যে, ‘কেমন লাগছে?’ উত্তরে উৎফুল্ল নায়িকা বলেন, ‘অসাধারণ। ড্রেসটি আমি গুছিয়ে রেখেছিলাম বিয়ের দিন পরার জন্য। আর বিয়ের দিনেই সেটা পরেছি।’
শত প্রতিকূলতা, শত তিক্ততা, শত মনোমালিন্য দূরে ঠেলে দীর্ঘ সময় পর হলিউডের এ দুই মহাতারকা নিজেদের মধ্যে গাঁটছড়া বাঁধলেন। বিশ্বের সব প্রান্তের সিনেপ্রেমীদের প্রত্যাশা, দৃঢ় আর মসৃণ হোক তাঁদের আগামীর পথচলা।