খুলনায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের আগের দিন শুরু হয়েছে দুই দিনের ‘পরিবহন ধর্মঘট’। এ কারণে যশোর থেকে খুলনাগামী আন্তঃজেলা বাসসহ সব ধরনের বাস বন্ধ রেখেছেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকেরা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। তবে যশোর থেকে যাত্রীবাহী বাস খুলনায় না গেলেও বাকি ১৯টি রুটে চলাচল করছে।
এ অঞ্চলের রুটগুলোর যাত্রীবাহী বাস এসে থামছে যশোর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে। বিভিন্ন জেলা থেকে যাত্রীরা যশোর পর্যন্ত এসে খুলনায় যেতে না পেরে ভোগান্তিতে পড়ছেন। অনেকে বাস না পেয়ে যশোর থেকে ফিরে যাচ্ছেন। অনেকে অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহনে খুলনার উদ্দেশে যাত্রা করছেন।
যশোর থেকে ২০টি রুটে বাস চলাচল করে। পরিবহন শ্রমিকেরা জানান, শনিবার খুলনায় বিএনপির সমাবেশ থাকায় যশোর থেকে খুলনাগামী বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। আজ শুক্রবার সকাল থেকে খুলনায় কোনো বাস যায়নি যশোর থেকে। খুলনা থেকেও যশোরে আসেনি।
যশোর জেলা পরিবহন সংস্থা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আজিজুল আলম মিন্টু জানান, তারা আনুষ্ঠানিক ধর্মঘটের ডাক দেননি। তবে গত কয়েকমাস আগে যশোরে অনুষ্ঠিত বিএনপির সমাবেশে ব্যবহৃত গাড়ির ৪৮ জন শ্রমিককে দুই দিন ধরে থানায় আটকে রাখা হয়। অনর্থক ওই হয়রানির ঘটনায় মালিকপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এমনকি আটক শ্রমিকদের খোঁজ পর্যন্ত রাখেনি। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা খুলনামুখী গাড়ি না চালানোর ব্যাপারে অনড়।
যশোর আন্তঃজেলা বাস সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক পবিত্র কাপড়িয়া বলেন, সরকারের কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। খুলনার সমাবেশকে কেন্দ্র করে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সেই কারণে আমরা নিজেরাই খুলনাগামী সকল রুটে বাস বন্ধ রেখেছি। এমনকি বিএনপির কোনো নেতাকর্মী বাস ভাড়াও দিচ্ছি না।
দুপুরে যশোর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ছেড়ে আসা খুলনাগামী যাত্রীবাহী পরিবহন যশোর বাস টার্মিনালে এসে থেমে যাচ্ছে। অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে ভোগান্তি সহ্য করে ইজিবাইক বা নছিমনে খুলনায় যেতে হচ্ছে যাত্রীদের।
যশোর থেকে খুলনাগামী বেসরকারি এনজিওকর্মী হুমায়ুন কবির তার ৬ মাস ও ৬ বছর বয়সী দুই মেয়েসহ স্ত্রীকে নিয়ে যশোর বাসটার্মিনালে বসে ছিলেন। তিনি বলেন, শুক্রবার ও শনিবার ছুটি থাকায় স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে খুলনার বয়রায় গ্রামের বাড়ি যাচ্ছিলাম। যশোর টার্মিনালে এসে দেখি বাস চলাচল বন্ধ। শুনেছিলাম খুলনার সঙ্গে বাস চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে এ রুটে সব বাস বন্ধ থাকবে সেটা জানতাম না। বাস না পাওয়ায় আর গ্রামের বাড়ি যাওয়া হলো না। কর্মস্থলের কোয়ার্টারে ফিরে যাব।
বিপ্লব বিশ্বাস নামে আরেক যাত্রী বলেন, অভয়নগর উপজেলা থেকে সকালে সমাজসেবা অধিদপ্তরে চাকরির নিয়োগ পরীক্ষা দিতে যশোর শহরে এসেছি। পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফেরার জন্যে দুপুরে বাস টার্মিনালে এসে দেখি খুলনা রুটে কোনো বাস চলছে না। বড় সংকটে পড়েছি। ইজিবাইকে কেটে কেটে যেতে গেলেও ভাড়া লাগছে বাসের চেয়ে দুই থেকে তিনগুণ বেশি। সহজে পাওয়াও যাচ্ছে না। রাজনৈতিক সমাবেশের কারণে সাধারণ মানুষের এই ভোগান্তি দেওয়ার কোনো মানে হয় না।
খুলনা-চুয়াডাঙ্গা লাইনের শাপলা পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার সবদুল শেখ বলেন, যশোর থেকে খুলনায় কোনো বাস চলাচল করছে না। অন্য রুটে যাতায়াত করছে।
যশোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, যশোরের কোনো বাস বা মাইক্রোবাস আমাদের কাছে ভাড়া দিচ্ছে না। এ বিষয়ে আমরা পরিবহন মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের অনেকে বলেছেন, সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
বিএনপি নেতারা জানান, যশোর থেকে প্রায় ১০ হাজার নেতাকর্মী খুলনার সমাবেশে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। বৃহস্পতিবার এক হাজারের মতো নেতাকর্মী খুলনা শহরে পৌঁছে গেছে। বাকিরাও বিকল্প উপায়ে পৌঁছে যাবে।