চলতি ২০২২ সালে কর্মক্ষেত্রে এক হাজার ১৯৫ জন শ্রমজীবী মানুষ দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। তার মধ্যে মোট ৯৬৭ মারা গেছেন। আর আহত হয়েছেন ২২৮ জন। এর মধ্যে সর্বাধিক ৪৭৬ জন হতাহত হয়েছেন পরিবহনখাতে জড়িতরা।
শুক্রবার (৩০ ডিসেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিত সাগর-রুনি মিলনায়তনে অক্যুপেশনাল সেইফটি, হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ফাউন্ডেশনের (ওশি) কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে আলোচকরা এসব কথা বলেন।
প্রতিবেদন তুলে ধরে সংগঠনের পরিচালক মো. আলম হোসেন জানান, ২০২২ সালে কর্মক্ষেত্রে এক হাজার ১৯৫ জন শ্রমজীবী মানুষ দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। তার মধ্যে নিহত হয়েছেন মোট ৯৬৭ জন আর আহত হয়েছেন মোট ২২৮ জন। প্রাতিষ্ঠানিক খাতে মোট মারা গেছেন ১৫২ জন এবং আহত হয়েছেন ৯৪ জন। আর অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে মারা গেছেন মোট ৮১৫ জন এবং আহত হয়েছেন মোট ১৩৪ জন।
কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনার লিঙ্গভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণে বলা হয়, প্রাতিষ্ঠানিক খাতে যে ৯৬৭ জন নিহত হয়েছেন তার মধ্যে নারী শ্রমিক ছিলেন ২৪ জন আর পুরুষ শ্রমিক ছিলেন ৯৪৩ জন। আর অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে যে ২২৮ জন আহত হয়েছেন তার মধ্যে নারী শ্রমিক ছিলেন ২৮ জন এবং পুরুষ শ্রমিক ছিলেন ১৯০ জন।
খাত ভিত্তিক তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনার প্রতিষ্ঠানিক খাতে যে ৯৬৭ জন শ্রমিক হতাহতের শিকার হন তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি শ্রমিক নিহত হয়েছেন পরিবহন খাতে। এই খাতে মোট হতাহতের সংখ্যা ৪৭৬। যার মধ্যে ৪২৫ জন মারা গেছেন, আর ৫১ জন আহত হয়েছেন। যা মোট হতাহতের ৪০ শতাংশ।
হতাহতের দিক দিয়ে পরিবহন খাতের পরেই রয়েছে সেবামূলক খাত। এই খাতে মোট ২৭০ জন শ্রমিক হতাহতের শিকার হয়েছেন, যার মধ্যে ২১১ জন মারা গেছেন আর ৫৯ জন আহত হয়েছেন। যা মোট হতাহতের ২৩ শতাংশ। এই সেবামূলক খাতের মধ্যে রয়েছে ওয়ার্কশপ, গ্যাস, বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, হোটেল বা রেস্টুরেন্ট, সরকারি সেবাদানকারি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মীরা।
এ অবস্থায় ওশির পক্ষ থেকে কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তার সীমাবদ্ধতা ও প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরে কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়।
সীমাবদ্ধতাগুলো হলো
১. বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৮) এবং বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা ২০১৫ এ উল্লিখিত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট নির্দেশনার যথাযথ প্রয়োগের অভাব।
২. শ্রমিকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের অভাব এবং পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক জ্ঞানের অভাব।
৩. অপর্যাপ্ত শ্রম পরিদর্শন ব্যবস্থা এবং জনবল কম থাকা।
৪. শিল্প-কারখানায় সেইফটি কমিটি গঠনের বিধান অনেকাংশে এড়িয়ে যাওয়া
৫. বয়লার পরিদর্শন বিভাগের সীমাবদ্ধতা।
৬.গ্রহকর্মীদের প্রতি অমানবিক আচরণ এবং ঝুঁকিপূর্ণ কাজের তালিকা না থাকা।
যেসকল সুপারিশ করা হয়েছে
১. বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৮) এবং বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা, ২০১৫ এ উল্লিখিত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিধানের যথাযথ প্রয়োগের লক্ষ্যে পরিবীক্ষণ ব্যবস্থা জোরদার করা।
২. কর্মস্থলে শ্রমিকদের উপযোগী ব্যক্তিগত সুরক্ষা উপকরণ ব্যবহার নিশ্চিত করা।
৩. বাংলার পরিদর্শকের সংখ্যা বৃদ্ধি করা।
৪. শিল্প মালিক ও ব্যবস্থাপকদেও জন্য জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরপত্তা নীতিমালা, ২০১৩ সম্পর্কে ওরিয়েন্টেশন প্রদান করা।
৫. শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ইউনিট চালু করা এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পেশাগত রোগের চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়ানো।
৬. শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড এলাকায় অবস্থিত মালিকপক্ষ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় নিয়ে আসা এবং এটির আধুনিকায়ন করা।
৭. অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকের পরিবার ও আহত শ্রমিককে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থাপনাধীন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ তহবিল থেকে আর্থিক সহায়তার আওতা বৃদ্ধি করা।
৮. কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর (ডিআইএফই) এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে যৌথ শ্রম পরিদর্শন ব্যবস্থ গড়ে তোলা।
৯. ক্ষুদ্র নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের কর্মপরিবেশ উন্নয়নে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি গ্রহণ এবং সরকারিভাবে প্রতিটি শ্রমিকের জন্য এমপ্লয়মেন্ট ইনস্যুরেন্স।
১০. কর্মক্ষেত্রে মুর্ছনা পরবর্তী যৌক্তিক সময় পার হলে নিখোঁজ শ্রমিকের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা।
১১. প্রাতিষ্ঠানিক এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কার্যকর নিরাপত্তা কমিটি গঠন করা।
১২. কর্মক্ষেত্রে সুধীন রোধে শ্রমিক মালিক ও জাম সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা।