পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে পরকালে পাড়ি দিয়েছেন ‘কালো মানিক’ খ্যাত ফুটবলার পেলে। তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়েছে।
মঙ্গলবার পূর্বনির্ধারিত ঘোষণা অনুযায়ী তাকে সাও পাওলোর অ্যাকুউমেনিকা মেমোরিয়াল নেক্রোপোল কবরস্থানের ১৪ তলা ভবনের প্রথম তলায় সমাহিত করা হয় ফুটবলের মহানায়ককে।
তাকে শেষবারের জন্য শ্রদ্ধা জানাতে ঢল নামে ভক্তদের। লাখো ভক্তের ভালোবাসায় সিক্ত হন তিনি।
তিনটি বিশ্বকাপজয়ী এ ফুটবল মহাতারকার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। তিনি বৃহস্পতিবার ব্রাজিলের সাও পাওলোর একটি হাসপাতালে পেলে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। এর চলতি বছর ২৯ নভেম্বর ক্যান্সারে আক্রান্ত পেলেকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি দীর্ঘদিন যাবত কিডনি এবং হৃদরোগের জটিলতায়ও ভুগছিলেন।
ইউরোপের বিভিন্ন ক্লাব থেকেও প্রতিনিধিদল গিয়েছিলেন পেলের শেষকৃত্যে অংশ নিতে। তারা সহমর্মিতা জানিয়েছেন পেলের স্ত্রী মার্সিয়া আওকি, তিন সন্তান এদিনহো, সিলেস্তে ও কেলি নাসিমেন্তোকে।
মঙ্গলবার তার লাশ সান্তোসের মাঠ ভিলা বেলমিরো থেকে মেমোরিয়া নেকরোপোল একিউমেনিকা সমাধিস্থলে যাওয়ার পথেও রাস্তায় দুই পাশে হাজার হাজার মানুষ দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। কারোও হাতে ছিল পেলেকে ভালোবাসার কথা জানিয়ে লিখে আনা পোস্টার-প্ল্যাকার্ড, কেউ গায়ে দিয়ে এসেছিলেন সান্তোসে পেলের সেই বিখ্যাত ১০ নম্বর জার্সি। কেউ কেঁদেছেন অঝোরে, কেউ তাকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন লাশ বহনকারী গাড়িতে ফুল ছিটিয়ে।
সান্তোস স্টেডিয়াম থেকে সাও পাওলোর ফায়ার সার্ভিসের বিশেষ গাড়িতে করে পেলের লাশ নিয়ে শহরের বড় রাস্তাগুলো প্রদক্ষিণ করা হয়। একপর্যায়ে গাড়ি নিয়ে যাওয়া হয় পেলের মায়ের বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে। শতবর্ষী পেলের মা সেলেস্তে এখনো থাকেন সেই বাড়িতে।
বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে পেলের অন্য আত্মীয়স্বজনেরা শেষবিদায় জানিয়েছেন তাকে। স্মৃতিভ্রংশ রোগে আক্রান্ত সেলেস্তে তার পুত্রের চলে যাওয়াটা এখনো বুঝে উঠতে পারেননি বলে চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে জানিয়েছিল ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যমগুলো।
পেলেকে সমাধিস্থ করা হয়েছে মেমোরিয়া নেকরোপোল একিউমেনিকার প্রথম তলায়। তবে সেখানে সাধারণ মানুষদের প্রবেশাধিকার ছিল না। শুধু পরিবারের সদস্য ও আমন্ত্রিত অতিথিরা। ব্রাজিলিয়ান দৈনিক ও’গ্লোবো তাদের অনলাইন সংস্করণে জানিয়েছে, সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে স্থানীয় সময় বেলা ২টার দিকে পেলেকে সমাধিস্থ করা হয়।
শুরুতে তাকে পেলেকে মেমোরিয়া নেকরোপোল একিউমেনিকার নবম তলায় তার বাবা ও ভাইয়ের পাশে সমাধিস্থ করার সিদ্ধান্ত হয়। তবে ভবিষ্যতে সর্বসাধারণ যাতে সহজেই ফুটবলের রাজাকে শ্রদ্ধা জানাতে পারেন, সেজন্য প্রথম তলাতেই পেলেকে সমাধিস্থ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তা ছাড়া পেলের সমাধিস্থল ঘিরে একটি জাদুঘর তৈরিরও পরিকল্পনা আছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।