চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে কিডনি ডায়ালাইসিসের ফি কমানোর দাবিতে সড়ক অবরোধে পুলিশের সঙ্গে বিরোধের জেরে গ্রেপ্তার হওয়া কলেজছাত্র মো. মোস্তাকিমের জামিন দিয়েছেন আদালত। রোববার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. অলি উল্লাহর আদালত জামিন আদেশ দেন। মোস্তাকিমের পক্ষে জামিন শুনানি করেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের আইনজীবি অ্যাডভোকেট শুভাশীষ শর্মা।
তিনি বলেন, উভয়পক্ষের যুক্তি শুনে আদালত মোস্তাকিমের জামিন মঞ্জুর করেন। আদালত থেকে কাগজপত্র কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। আজই তিনি মুক্তি পেতে পারেন।
পাঁচলাইশ থানার ওসি (তদন্ত) সাদেকুর রহমান জানান, চমেক হাসপাতালে কিডনি ডায়ালাইসিসের ফি কমানোর দাবিতে সড়ক অবরোধ করে রোগী ও তাদের স্বজনরা। এ সময় সড়কের ওপর থেকে সরে গিয়ে আন্দোলন করার অনুরোধ জানালে তারা পুলিশের উপর চড়াও হন। একপর্যায়ে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন। তাই পুলিশের উপর হামলা ও কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে এ মামলা দায়ের করা হয়।
গত ১০ জানুয়ারি চমেক হাসপাতালে কিডনি ডায়ালাইসিসের ফি কমানোর দাবিতে সড়ক অবরোধকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে রোগী ও তাদের স্বজনদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এতে মোস্তাকিম নামে এক রোগীর স্বজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ঘটনার দিন রাতেই পাঁচলাইশ থানার এসআই মোস্তাফিজুর রহমান বাদী হয়ে মোস্তাকিমের নাম উল্লেখ করে মামলা করে। এ ছাড়া অজ্ঞাত আরও ৫০ থেকে ৬০ জনকে মামলার আসামি করা হয়।
পিপিপি’র (পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ) আওতায় ভারতীয় প্রতিষ্ঠান স্যান্ডর মেডিকেইডস লিমিটেড ডায়ালাইসিস সেবা দিয়ে আসছে চমেক হাসপাতালে। আগে সরকারিভাবে প্রতি সেশনে ৫১০ টাকা ও বেসরকারিভাবে ২ হাজার ৭৯৫ টাকা করে ডায়ালাইসিস করা হতো। কিন্তু প্রতি বছর চুক্তি অনুযায়ী ৫ শতাংশ বেড়ে গিয়ে ডায়ালাইসিস ফি দাঁড়িয়েছে সরকারিভাবে ৫৩৫ টাকা ও বেসরকারিভাবে ২ হাজার ৯৩৫ টাকা। এ কারণেই রোগীরা ফি কমানোর দাবিতে আন্দোলনে নামে। সেই আন্দোলনে নেমে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার ও মামলার আসামি হন এক রোগীর ছেলে মোস্তাকিম।
চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায় নিজেদের বাড়ি হলেও চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার জালালাবাদ অপিজেন এলাকায় সন্তানদের নিয়ে বসবাস করেন গৃহবধু নাসরিন আক্তার। প্রায় ছয় বছর আগে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম তার স্বামী খালেদ আজম মারা যান। ছেলে মো. মোস্তাকিম পড়েন চট্টগ্রাম কলেজে। পড়ালেখার পাশাপাশি মায়ের ডায়ালাইসিস ও সংসার চালাতে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চার থেকে পাঁচটি টিউশন করেন তিনি। তাকে গ্রেপ্তারের পর দেশজুড়ে নিন্দার জড় ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে।