এক মাসেরও বেশি সময় আগে প্রক্টরিয়াল বডির কর্তব্য পালনে বাধা ও শিক্ষককে হেনস্থার অভিযোগে বিশ্বদ্যিালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার হওয়ার পরদিন ছাত্রলীগের অপর পক্ষের হাতে মার খেলেন দুই বহিষ্কৃত নেতাসহ তিনজন। আজ বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন তাজান্না কনফেকশনারীর সামনে এ ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনা প্রক্টরের ইন্ধনে ঘটছে অভিযোগ তুলে ভুক্তভোগীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেছেন।
মারধরের শিকার তিনজন হলেন শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সালমান চৌধুরী হৃদয় ও বিজ্ঞান অনুষদ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাইদুল ইসলাম রোহান। এদের মধ্যে প্রথম দুজনকে বহিষ্কার করে কুবি প্রশাসন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সদ্য সাবেক সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ সমর্থিত এনায়েত উল্লাহ, সালমান চৌধুরী হৃদয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শরীফ উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক সায়েম ও সাদ্দামসহ কয়েকজন দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন। হঠাৎ ২০১৭ সালে বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক রেজা-ই-এলাহি সমর্থিত ১২ থেকে ১৫ জন নেতাকর্মী তাঁদের ওপর হামলা চালায়। এসময় তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন স্থানীয় ছাত্রদল নেতা রনি মজুমদার। হামলায় এনায়েত উল্লাহ জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এরপরও গাছের খণ্ড দিয়ে তাঁকে আঘাত করতে থাকেন হামলাকারীরা। মারধরের ঘটনায় রোহানের হাত ভেঙে গেলে তাঁকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
মারধরের শিকার নেতা সালমান চৌধুরী বলেন, ‘আমাকে বিপ্লব চন্দ্র দাস (২০১৬ সালে কুবি ছাত্রলীগের আন্তকোন্দলে নিহত কাজী নজরুল ইসলাম হলের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহ হত্যা মামলার আত্মস্বীকৃত খুনি) ডেকে নিয়ে প্রশাসন বহিষ্কার করার পরও কেন বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান করছি, তা জানতে চায়। এ নিয়ে তার সঙ্গে আমার কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে হঠাৎই সে আমাকে ও এনায়েত ভাইকে মারধর করতে থাকে।’
তবে এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে রেজা সমর্থিত বিপ্লব চন্দ্র দাসের মুঠোফোনে কল দিলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে প্রতিবেদকের কল কেটে দেন। পরে একাধিকবার চেষ্টা করেও তাঁর মুঠোফোনে সংযোগ পাওয়া সম্ভব হয়নি।
এদিকে বিষয়টিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ইন্ধন হিসেবে মন্তব্য করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরের পদত্যাগ দাবিতে অবস্থান নিয়েছেন ইলিয়াস সমর্থিত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। তাঁদের দাবি, প্রক্টর পেছন থেকে ইন্ধন দিয়ে এসব ঘটনা ঘটাচ্ছেন। গতকাল বহিষ্কারের পর আজ তাঁদেরই ওপর হামলা এবং বিভিন্ন সময়ে সংগঠিত প্রতিপক্ষের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া তার প্রমাণ।
কাজী নজরুল ইসলাম হলের সাবেক সভাপতি ইমরান হোসেন বলেন, ‘খুনি বিপ্লব ও ছাত্রদলের লোকজন কীভাবে হল ছাত্রলীগ সেক্রেটারিকে মারধর করে? তাঁরা অছাত্র হয়েও হলে উঠতে চেষ্টা করার পরও প্রশাসন তাঁদের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আধা ঘণ্টার মধ্যে এর কোনো সমাধান না আসলে আমরা প্রক্টরের পদত্যাগ থেকে পিঁছু হটব না।’
আজ বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত প্রক্টরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো সাড়া না আসায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবস্থান নিয়েছেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। মহাসড়কে প্রায় তিনশ নেতাকর্মী অবস্থান নিয়েছেন। ক্যাম্পাস ফটকে অবস্থান নেওয়ার পর তারা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান।
তবে প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমার কোনো ইন্ধন নেই। যারা এমনটি বলছে তাদের এটিকে প্রমাণ করতে হবে। হামলার ঘটনা আমরা পুলিশ প্রশাসনকে জানিয়েছি, এখন এটি (ব্যবস্থা নেওয়া) তাঁদের (পুলিশ) বিষয়।’
এ বিষয়ে কোটবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক এস এম আতিক উল্লাহ বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমি উপাচার্য স্যারের সঙ্গে কথা বলেছি। হামলাকারীদের যত দ্রুত সম্ভব আমরা আটক করব।’
এর আগে গত ৩০ জানুয়ারি বিপ্লব চন্দ্র দাসসহ আরও কয়েকজন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ‘অবৈধভাবে’ উঠতে চান। তখন তাঁদেরকে বাধা দেন ইলিয়াস সমর্থিত নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় সহকারী প্রক্টর অমিত দত্তের সঙ্গে এনায়েত ও সালমানের বাগবিতণ্ডা ঘটে। এর জের ধরে উভয় নেতাকে সাময়িক বহিষ্কার করে কুবি প্রশাসন।