রাজনীতি

সরকারের দড়ি ধরে টান মারার সময় এসেছে : মির্জা ফখরুল

পদত্যাগ না করলে সরকারের ফয়সালা রাজপথেই করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আমি খুব সুস্পষ্ট করে বলতে চাই, তাদের সামনে কোনো বিকল্প নেই। এরা সহজে যায় না, এদেরকে ধাক্কা মারতে হয়। আপনাদের অনেকে হীরক রাজার দেশে ছবিটা দেখেছেন না। ছবিতে কী বলছে- দড়ি ধরে মারো টান, রাজা হবে খান খান। সুতরাং দড়ি ধরে টান মারার সময় এসেছে।

বুধবার বিকালে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ১৭তম কারাবন্দী দিবস উপলক্ষে দলটি এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।

এ সময় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরো বলেন, আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। আমাদের নেতা তারেক রহমান। তিনি আমাদেরকে খুব পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছেন যে, ফয়সালা হবে রাজপথে। রাজপথেই আমরা আছি, রাজপথেই এর মীমাংসা আমরা করব ইনশাল্লাহ।

এখনো সময় আছে সরে যান- সরকারের প্রতি এমন আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, কোনো কথা বলে লাভ হবে না। এখনো সময় আছে, আমরা যে ১০ দফা দিয়েছি সেই ১০ দফা মেনে নিন। পদত্যাগ করুন, সংসদ বিলুপ্ত করুন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন ।

‘এটাই শেষ সময়, এটা মেনে নেন। তা না হলে বার বার একই কথা বলছি, আবারো বলছি, পালাবার পথ খুঁজে পাবেন না। এই কথা বললে আপনাদের গায়ে লাগে। বলেন, কোথায় পালাব। পালিয়েছেন তো অতীতে। সব পালিয়েছেন। কেউ পাকিস্তানে পালিয়েছেন, কেউ ভারতে পালিয়েছেন ১৯৭১ সালে। এবার কিন্তু সেই পথও খুঁজে পাবেন না। আবারো বলছি, দয়া করে পরিবর্তন নিয়ে আসুন। এই সংকট উত্তরণ করুন। নইলে কোথাও পালাবার পথ পাবেন না।’ বলেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, ‘আজকে তারেক রহমানের ১৭তম কারাবন্দী দিবস। এই কারাবন্দী দিবস তখনই আমাদের সফল হবে যখন আমরা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এদেরকে পরাজিত করে জনগণের সরকার, জনগণের একটা দেশ, মুক্ত একটা সমাজ, গণতান্ত্রিক সমাজ, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন করতে পারবো, আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে পারব, তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে পারব তাহলেই হবে সফলতা। আসুন সেই লক্ষ্যে আমরা এগিয়ে যাই।

তিনি বলেন, এরকম অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা, আটক করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। অন্যথায় জনগণ এর প্রতিরোধে গড়ে তুলবে, এর জবাব আপনাদেরকে দেয়া হবে।

পঞ্চগড়ের ঘটনা আওয়ামী লীগের সৃষ্টি মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, পঞ্চগড়ের হামলার ঘটনায় আমাদের জড়ানোর জন্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বক্তব্য দিয়েছেন যে, বিএনপিও জড়িত আছে। আমাদের প্রায় দেড় শ’ মানুষকে সেখানে গ্রেফতার করেছে। এখন পঞ্চগড় থেকে মানুষ বাইরে চলে যাচ্ছে। এর উদ্দেশ্যটা কী? উদ্দেশ্য একটাই আবার সেই ষড়যন্ত্র করে বিএনপিকে আবার সাম্প্রদায়িক ঘটনার জন্য দায়ী করে ‍উদোর-পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপাতে চায়। কিন্তু এখন আর জনগণ তাদের সেই কথা শুনবে না, তাদের সেই মিথ্যা মন্তব্য শুনবে না। তারা খুব ভালো করে জানে যে, আওয়ামী লীগ চক্রান্তমূলকভাবে নিজেরাই এই ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে, তাদের লোকেরাই ঘটিয়েছে সেজন্য তারা উদোর-পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপাতে চায়।

তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে তাদের (সরকার) রেলমন্ত্রী সেখানে গিয়েছিলেন। রেলমন্ত্রী যখন সেখানে গেছেন তখন আহমদীয়া সম্প্রদায়ের লোকেদের জিজ্ঞাসা করেছেন এর জন্য দায়ী কে, কারা করেছে? তখন তারা বলেছেন, আপনার (মন্ত্রী) পাশে যারা যারা আছে তারাই এজন্য দায়ী, আওয়ামী লীগের লোকেরা করেছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, কিভাবে দেশ চালায়? পর পর তিন দিন বিস্ফোরণ হলো। সায়েন্স ল্যাবরেটরির কাছে হলো, চট্টগ্রামে হলো, ঢাকায় গতকালের বিস্ফোরণে ‘১৯ জন’ প্রাণ দিয়েছেন। কারো কোনো দায় নেই।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরীর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, আহমেদ আজমদ খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লা্হ আমান, আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, আবদুস সালাম আজাদ, মহিলা দলের হেলেন জরিন খান, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, যুব দলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, আবদুল মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের এস এম জিলানি, কৃষক দলের শহিদুল ইসলাম বাবুল, মতস্যজীবী দলের রফিকুল ইসলাম মাহতাব, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ ও ছাত্র দলের সাইফ মাহমুদ জুয়েল বক্তব্য রাখেন।