জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশকে সভা-সমাবেশের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি আব্দুর রউফ।
আজ শুক্রবার (৯ জুন) জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘বাক ও ব্যক্তির স্বাধীনতা এবং বিপন্ন মানবাধিকার : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’-শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. আব্দুর রবের সভাপতিত্বে ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম রহমান ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য প্রদান করেন ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট এস এম কামাল উদ্দিন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সহ-সভাপতি, বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট আব্দুল বাতেন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইউসুফ আলী, বিশিষ্ট শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আতিয়ার রহমান, নাগরিক ফোরামের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহিল কাফি, নাগরিক ফোরামের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট পারভেজ হোসেন।
সভায় বক্তারা বলেন, সংবিধান অনুযায়ী দেশের মানুষের বাক স্বাধীনতা নেই, মানবাধিকার নেই, চলাচলের স্বাধীনতা নেই। রাজনৈতিক সভা সমাবেশ মিছিল মিটিংয়ে স্বাধীনতা নেই। সংবিধান অনুযায়ী প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের মিছিল সমাবেশ করার রাজনৈতিক অধিকার আছে।
প্রধান অতিথি বিচারপতি মোহাম্মদ আব্দুর রউফ বলেন, বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীকে সমাবেশের অনুমতি দিতে সরকার টালবাহানা করছে। জামায়াতেরও মিছিল সমাবেশের অধিকার আছে এবং তাদেরকে এটা দিতে হবে। তাদেরকে এই অধিকার থেকে বঞ্চিত করা সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। মানুষের কল্যাণে এতো এতো রাইটস করলাম। কিন্তু আজ মানবাধিকার লুণ্ঠিত হচ্ছে। সংবিধান অনুযায়ী মানুষের মৌলিক অধিকার আছে। কিন্তু জনগণ তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। মানবাধিকার কথাটাই হচ্ছে খারাপ। আল্লাহ মানুষকে তার খলিফা হিসাবে পাঠিয়েছেন। মানুষের কাজ হলো মানুষের প্রকৃত অধিকার রক্ষা করা। এটা পালন করতে পারলে মানবাধিকার নিয়ে কেউ প্রশ্ন করবে না। কিন্তু কেউ তা মানছে না।
ড. মোহাম্মদ আব্দুর রব সভাপতির বক্তব্যে বলেন, আমাদের দেশে বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে। বাক স্বাধীনতা নেই। ইলিয়াস আলী, ব্যারিস্টার আরমান, ব্রিগেডিয়ার আযমী গুম হয়ে গেছে। সাংবাদিকরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কারণে লিখতে পারছে না। ভারত যখন তার অখণ্ড ভারতের মানচিত্র প্রকাশ করে। অথচ এদেশের সরকার প্রতিবাদ করেনা স্বাধীনতার চেতনা তখন হারিয়ে গেছে। জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বিশ্বের ২১০ টি দেশের মধ্যে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনের শাসন, বাক স্বাধীনতা, পরিবেশ দূষণে আমরা সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছি।
ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সহ সভাপতি অ্যাডভোকেট এস এম কামাল উদ্দিন বলেন, আইনমন্ত্রী সংসদে জানিয়েছেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা আছে ২৪ হাজার। এই কালো আইনের মাধ্যমে মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে। আজ দেশে বাক স্বাধীনতা নেই, মানবাধিকার নেই। ডলার নাই, রিজার্ভ নাই। দেশকে আজ খালি করে দিয়েছে বর্তমান সরকার। বিরোধী রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীদেরকে কারণ ছাড়াই গ্রেফতার করা হচ্ছে। এভাবে দেশ চলতে পারে না।
সুপ্রিম কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল বাতেন বলেন, আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। ভারতকে সব ফ্রি দিয়ে দেয়ার জন্য নয়। ভারতের গাড়ি আমাদের দেশের উপর দিয়ে যাচ্ছে টোল দেয় না। বন্দর ব্যবহার করছে টোল দিচ্ছে না। স্বাধীনতার পর ভারত আমাদের দেশ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকার সম্পদ লুটপাট করেছে। ভারত অখণ্ড ভারতের মানচিত্র স্থাপন করেছে। কিন্তু কোনো প্রতিবাদ নেই।
বিশিষ্ট আইনজীবী অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ ইউসুফ আলী বলেন, কেউ যদি বলে প্রধান বিচারপতিকে নামিয়ে দিয়ে ছিলাম। তাকেও ভবিষ্যতে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। দেশে আজ মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। আওয়ামী লীগ লাগাতার মিথ্যা বলে তাদেরকে জনগণ আর বিশ্বাস করে না।
শিশু বিশেষজ্ঞ ও অধ্যাপক ডা. আতিয়ার রহমান, দেশের মানুষ আজ চিকিৎসা পাচ্ছে না। দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে।
নাগরিক ফোরামের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহিল মাসুদ বলেন, ক্ষমতাশীন আওয়ামী লীগ ফ্যাসিস্ট ও মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী। সংবিধানের কেথাও নেই পুলিশ থেকে অনুমতি নিয়ে মিছিল সমাবেশ করতে হবে। কোনো রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আছে কিনা তার উপরে নির্ভর করে না মিছিল মিটিং। এ কথা আমাদের সংবিধানে নেই। জামায়াত ও বিএনপি ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করলে বর্তমান ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার সাত দিনও টিকতে পারবে না। ইসলাম ও জাতীয়তাবাদী শক্তি ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।