নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের চনপাড়ায় মাদক কারবারসহ অপরাধ নিয়ন্ত্রণে নিতে আবার দুই গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে চারজন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় পুরো এলাকায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
শুক্রবার রাত থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
গুলিবিদ্ধ আলমগীর হোসেন, হৃদয় খান, ইসমাইল ও ইলিয়াছকে (১৭) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতরা সবাই চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা।
ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া জানান, শুক্রবার রাতে নারায়ণগঞ্জের চনপাড়া থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় চারজনকে ঢাকা মেডিকেলে আনা হয়। বর্তমানে জরুরি বিভাগে তারা চিকিৎসাধীন রয়েছেন। শুক্রবার দিনগত রাত ১টা ৩০ মিনিটের দিকে গুলিবিদ্ধের ঘটনা ঘটে। পরে তাদের উদ্ধার করে রাত ৩টা ৩০ মিনিটের দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে আনা হয়।
গুলিবিদ্ধদের হাসপাতালে নিয়ে আসা আলম জানান, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে চনপাড়া বাজারে ইউপি সদস্য শমসের বাহিনীর সঙ্গে প্রতিপক্ষ জয়নাল বাহিনীর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় শমসের হঠাৎ এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। এতে ওই একই এলাকার আলমগীরের বাম পায়ে, হৃদয়ের কোমরে, ইসমাইলের হাতে ও ইলিয়াসের পায়ে গুলি লাগে। পরে তাদের রাত সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকা মেডিকেলে আনা হয়। বর্তমানে জরুরি বিভাগে তাদের চিকিৎসা চলছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের চনপাড়ার শীর্ষ মাদককারবারি ও ইউপি সদস্য বজলুর মারা যাওয়ায় গত ১২ জুন এখানে উপনির্বাচন হয়। এরপর থেকে চনপাড়ার আধিপত্য বিস্তার ও মাদক কারবারের দখল নিয়ে কয়েকদিন পরপর চনপাড়ার চিহ্নিত মাদক কারবারি জয়নাল ও শমসেরের গ্রুপের মাঝে গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটিয়ে আসছে। গত ১২ জুন উপ-নির্বাচনে শমসের ইউপি সদস্য বিজয়ী হওয়ার পর থেকে শমসের গ্রুপ ও তার প্রতিপক্ষ জয়নাল গ্রুপ আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র এলাকার মাদক কারবার থেকে শুরু করে অপরাধের নিয়ন্ত্রণ হাতে নিতে উভয় গ্রুপ উঠে পড়ে লাগে।
শুক্রবার মধ্যরাতে ইউপি সদস্য শমসেরসহ তার লোকজন বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এলাকায় অবস্থান নেয়। অপরদিকে শমসেরের প্রতিপক্ষ জয়নালসহ তার লোকজনও বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পাল্টা অবস্থান নেয়। এক পর্যায়ে উভয় গ্রুপের লোকজন সশস্ত্র অবস্থায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় উভয় গ্রুপের লোকজন একপক্ষ আরেক পক্ষকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে। এতে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
স্থানীয়রা জানান, এলাকার অন্তত ২৫ থেকে ৩০টি বাড়িঘর ভাঙচুর এবং লুটপাট করা হয়। সংঘর্ষে উভয় গ্রুপের ৪জন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। রাতেই গুলিবিদ্ধ আলমগীর হোসেন, হৃদয় খান, ইসমাইল ও ইলিয়াছকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রাতে শুরু হওয়া সংঘর্ষ শনিবার দুপুর পর্যন্ত চলে। পরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
রূপগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আতাউর রহমান বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। চনপাড়ার অপরাধ কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে থানা পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।