জাতীয়

কূটনীতিকদের ভিডিও দেখিয়ে হামলার তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরল বিএনপি

দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঢাকায় অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে ব্যাখ্যা করেছে বিএনপি। বিশেষ করে ২৮ জুলাই ঢাকার মহাসমাবেশ ও ২৯ জুলাই রাজধানীর প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচিতে হামলা, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও নেতাকর্মীদের মারধরসহ বিস্তারিত তাদের কাছে তুলে ধরে দলটি।

বুধবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে কূটনীতিকদের সঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টা বৈঠকে তারা এসব তুলে ধরেন।

বৈঠকে ওই দিনের ঘটনার ওপর নির্মিত একটি ভিডিও দেখিয়ে বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেছেন, তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছিল। বিনা উসকানিতে পুলিশ ও ক্ষমতাসীনরা তাদের ওপর হামলা করেছে। পুলিশের উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা গাড়িতে আগুন দিয়েছে। নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশি হামলার চিত্রই বেশি করে তুলে ধরা হয় বৈঠকে। সংঘর্ষের পুরো তথ্যপ্রমাণ প্রতিবেদন আকারে কূটনীতিকদের কাছে দেওয়া হয়। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

বৈঠকে স্বাগত ও সমাপনী বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবাইদা রহমানকে সাজা দেওয়ার ঘটনার নিন্দা জানান। তিনি বলেন, তারেক রহমানকে রাজনীতি ও নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে দূরে রাখতে এ সাজা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সংঘর্ষের পুরো বিষয়টি তিনি কূটনীতিকদের অবহিত করেন।

তিনি জানান, বিএনপি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে আসছে। ২৯ জুলাইয়ের কর্মসূচিও ছিল শান্তিপূর্ণ। কিন্তু সেদিন পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা বিনা উসকানিতে তাদের ওপর হামলা চালায়।

বৈঠক শেষে দলের বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিদেশিরা জানতে চায় বাংলাদেশে কী হচ্ছে। সেজন্য ২৯ তারিখের আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে সরকার ও সরকারি দলের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের যৌথ হামলা, মিথ্যা মামলা, গ্রেফতার ইত্যাদি বিষয়গুলো আমরা বলেছি। যাদের পিটিয়ে আহত করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। অনেকে বিদেশে আছেন, অনেকে হজে ছিলেন তাদের বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছে। এতে মামলার উদ্দেশ্য বোঝাই যাচ্ছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, গণতন্ত্র দেখতে চায়, গণতান্ত্রিক অর্ডার দেখতে চায়, মানবাধিকার দেখতে চায় তাদের জন্য উল্লি­খিত তথ্যগুলো দরকার। একথাগুলো আমরা আগে প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছি। আজকে ডিপ্লোম্যাটদের একথাগুলো বলেছি। নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশে যে পথে চলছে তা ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনকে স্মরণ করিয়ে দেয়। সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। প্রতিনিয়ত বিচার বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে। যত ঘটনা ঘটবে আমরা সবার কাছে তা তুলে ধরব।

আপনাদের বক্তব্যের পর বিদেশি কূটনীতিকরা কি বলেছেন জানতে চাইলে আমির খসরু বলেন, আমরা তো সার্বিক পরিস্থিতি ব্রিফ করেছি। উনাদের বলার বিষয় নয়।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশে ও দেশের বাইরে এদের (সরকার) অধীনে যে নির্বাচন হবে না এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে। সেজন্য নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কথাটা এসেছে।

বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জার্মানি, জাপান, চীন, রাশিয়াসহ ২৫টি দেশের কূটনীতিকরা অংশ নেন। তবে কোনো দেশের রাষ্ট্রদূত উপস্থিত ছিলেন না।

বিএনপি নেতাদের মধ্যে আরও ছিলেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির সদস্য এনামুল হক চৌধুরী, শামা ওবায়েদ, আসাদুজ্জামান আসাদ, নওশাদ জমির, তাবিথ আউয়াল, ইশরাক হোসেন, ফাহিমা নাসরিন মুন্নী, রুমিন ফারহানা, ফারজানা শারমিন পুতুল প্রমুখ।

বৈঠকে উপস্থিত দলের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির কয়েক নেতা বলেন, বিএনপি কিভাবে শান্তিপূর্ণ অবস্থান নিয়েছিল তা ভিডিওর মাধ্যমে কূটনীতিকদের অবহিত করা হয়েছে। শান্তিপূর্ণ অবস্থানে ক্ষমতাসীনরা হামলা করেছে। পুলিশ গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে। পুরো ঘটনায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলোও তুলে ধরা হয়। দলের নেতারা এ সময় দাবি করেন, বিএনপি সহিংসতায় জড়ায়নি। ২৯ জুলাই অবস্থান কর্মসূচিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে পুলিশ কিভাবে পিটিয়েছে তা দেখানো হয়েছে। বৈঠকটি রুদ্ধদ্বার হওয়ায় সাংবাদিকদের ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।