নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাহরীর ২০০৯ সালে নিষিদ্ধ হয়। এরপর তারা গোপনে সদস্য সংগ্রহ ও সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। বিভিন্ন সময় সংগঠনের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা গেলেও আড়ালে থেকে গেছেন শীর্ষ নেতারা। কাটআউট পদ্ধতিতে কার্যক্রম চালানোর জন্য কোনভাবেই শীর্ষ নেতাদের শনাক্ত করতে পারেনি গোয়েন্দারা। গত সেপ্টম্বরে অনলাইনে সম্মেলনের আয়োজন করে সংগঠনটি। সেখানে হিজবুত তাহরীরের শীর্ষ নেতা তৌহিদুর রহমান ওরফে তৌহিদ ওরফে সিফাত প্রধান বক্তা ছিলেন। তারপর থেকে তাকে গ্রেপ্তারে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে আসছে গোয়েন্দারা। গত বুধবার রাতে কক্সবাজার থেকে তৌহিদুর গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটর (সিটিটিসি) সিটি-ইন্টেলিজেন্স অ্যানালাইসিস বিভাগ।
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানানো হয়। এতে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (সিটিটিসি প্রধান) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, হিজবুত তাহরীরের শীর্ষ নেতাদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা ছিল একটা বড় চ্যালেঞ্জ। তারা হাইলি রেডিকালাইজড এবং কাটআউট পদ্ধতিতে সাংগঠনিক কাজ চালিয়ে আসছিল। হিজবুত তাহরীরের সবচেয়ে বড় নেতাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে সিটিটিসি। গ্রেপ্তার তৌহিদুর হিজবুত তাহরীরের শীর্ষ ২-৩ জনের মধ্যে একজন বলে দাবি করেছেন তিনি।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, হিজবুত তাহরীর সাধারণত উচ্চবিত্ত ও মেধাবীদের টার্গেট করে প্রচারণা চালায়। তাদের ভাবনা, যদি এই শ্রেণিকে রিক্রুট করতে পারে প্রতিষ্ঠিত সমাজে সমর্থন পাবে এবং খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। তারা সদস্য সংগ্রহের জন্য বিশ্বিবদ্যালয়কে টার্গেট করে। গ্রেপ্তার তৌহিদের পরিবারের একজন সদস্য সিভিল সার্ভিস কর্মকর্তা। পরিবারের কয়েকজন সদস্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। তৌহিদ ২০১১ ও ২০১৯ সালে গ্রেপ্তার করা হয়েছিলেন। জেল থেকে জামিনে বেরিয়ে আবারও সাংগঠনিক কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়েন। দীর্ঘ ১২ বছরে তৈহিদ সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়ে চলে আসেন।’
মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘যেসব এলাকা সিসিটিভির আওতায় নেই, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি কম- সেসব স্থানে তারা পোস্টার লাগাতো। তারপরেও পোস্টার লাগানোর সময় অনেককে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু শীর্ষ নেতাদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার চ্যালেঞ্জ ছিল। তারা কাটআউট পদ্ধতিতে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে। এতে করে নিচের সারির কাউকে গ্রেপ্তার করা গেলেও উপরের কারোর তথ্য পাওয়া যায়নি। এই প্রথম সিটিটিসি হিজবুত তাহরীরের সবচেয়ে বড় নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে।’
সিটিটিসি প্রধান বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকের প্রচেষ্টায় ২০০৩ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে হিজবুত তাহরীর। ২০০৯ সালে হিজবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সরকার। এরপর থেকে আত্মগোপনে থেকে সংগঠনের নেতারা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। এর মধ্যে অনেককে গ্রেপ্তার করেছি, কিন্তু শীর্ষ পর্যায়ের নেতা গ্রেপ্তার এবারই প্রথম। গত ৩০সেপ্টেম্বর হিজবুত তাহরীর একটি অনলাইন সম্মেলন করে। তারা সম্মেলনের জন্য রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পোস্টার টানায়, অনলাইন প্রচারণা ও ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে আলোচনায় আসে তারা। ওই সম্মেলনে প্রধান বক্তা ছিলেন তিনি।’
অনলাইনে সম্মলনের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘সম্মেলনের বিষয়টি জানার পর দ্বিধাদন্দ্বে ছিলাম দেশে নাকি দেশের বাইরে সেটি হয়েছে। এখনও স্থানটি নিদিষ্টভাবে শনাক্ত করতে পারিনি, তবে দেশের কোথাও করেছে। আশা করছি জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারব। এরপর থেকেই শীর্ষ নেতাদের শনাক্ত করতে কাজ চলছিল। কিন্তু শনাক্ত করতে পারিনি। তাদের শনাক্ত করা চ্যালেঞ্জের বিষয় ছিল।’
আসাদুজ্জামান বলেন, ‘সম্মেলনে মঞ্চে উপস্থিত তিনজনের মধ্যে দুজন বক্তব্য দেয় ও একজন উপস্থাপক ছিল। প্রধান ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে পেরেছি, আশা করছি বাকি দুজনকে গ্রেপ্তার করতে পারব। তাদের সম্মেলনের মূল বিষয় ছিল বর্তমান সরকারকে উৎখাত করা। তারা কাটআউট, স্লিপার সেল পদ্ধতিতে কাজ করে। তাদের রিক্রুট কৌশলটাও একটু অন্যরকম। বিভিন্ন গ্রুপকে টার্গেট করে মেসেজ দেয় তাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য। বিষয়গুলো জানার চেষ্টা করা হবে।’
কারাগারে রেডিকালাইজেশনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কারাগারে পুলিশের কোনো সুপারভিশন থাকে না। তবে আশা করি কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে সচেতন। যতটুকু জানি, জঙ্গিদের আলাদা সেলে সর্বোচ্চ নজরদারিতে রাখা হয়। এরপরেও তারা সুযোগ নিয়ে নিজেদের কাজ করে। কারাগারে ডিরেডিক্যালাইজড সিস্টেমের মধ্যেও যাচ্ছি, খুব শীঘ্রই কাজ শুরু করব। জঙ্গিরা জেল থেকে বের হয়ে সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়েও চলে আসছে, এ বিষয়ে কনসার্ন।’
এই কর্মকর্তা বলেন, ‘তৌহিদুরকে বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতে তুলে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। পরে তাকে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেছে আদালত। আশা করছি, রিমান্ডে তার কাছ থেকে সংগঠন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে।