রাজনীতি

প্রকৃতিকে প্রতিনিয়ত ধ্বংস করছে সরকারি দলের লুটেরা-ভূমিদস্যুরা : রিজভী

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, প্রকৃতিকে সরকারি দলের লুটেরা-ভূমিদস্যুরা প্রতিনিয়ত ধ্বংস করছে। ফলে তপ্ত গরমে মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে।

শুক্রবার (৩ মে) সারাদেশে চলমান তীব্র তাপদাহে অতিষ্ঠ নগরীর পথচারীদের মাঝে ঢাকা মহানগর উত্তরের তুরাগ থানা বিএনপির পক্ষ থেকে খাবার পানি ও স্যালাইন বিতরণ কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন।

এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ক্রীড়া সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক, পটুয়াখালী প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. আবদুল লতিফ মাসুম, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক শাহ খালিদ হাসান চৌধুরী পাহিন, সহ-অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন।

রিজভী বলেন, ‘তপ্ত গরমে মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। এই আবহাওয়ার কারণ আমরা শুধু প্রকৃতিকে দোষ দিতে পারি না। এই দোষ মানুষের আছে। প্রকৃতিকে প্রতিনিয়ত লুটেরা-ভূমিদস্যুরা ধ্বংস করছে। এরা সবাই সরকারি দলের লোক। তারা যেমন প্রকৃতিকে ধ্বংস কর‌ছে তেমনি বিরোধী দলকে দমন করার পাশাপাশি ব্যবসা, জমিজমা দখল করে নিয়েছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে মামলা দিচ্ছে, গুম-খুন করছে, বাড়িঘর-ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দখল করছে আওয়ামী লীগের লোকজন। ফলে বিএনপির নেতাকর্মীরা অনেকেই ঢাকায় এসে রিকশা চালায়। এদের অনেকেই দেখবেন বিএ পাস, এমএ পাস করেছে।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশে রিজভী বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা হতাশ তারা বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে। বিএনপি নেতাকর্মীরা বিদেশে পাড়ি দিবে কেন? বিদেশে পাড়ি দেয়ার যে ভাড়া সেটাই তো তাদের পকেটে নাই।’

‘মেট্রোরেলের টাকা, বিভিন্ন ঠিকাদারি টাকা, পদ্মা সেতুর টাকা, কয়লা পুড়িয়ে যে তাপকেন্দ্র করেছেন সেই টাকা- এই টাকাগুলো রাখবেন কোথায়? এ টাকাগুলো লুকানোর জন্য ক্ষমতাসীন লোকেরাই তো বিদেশ পাড়ি দিচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের লোকজন ও তাদের ব্যবসায়ীরা কত টাকা লুটপাট করেছে এটা সাংবাদিকরা যাতে না জানে সেজন্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। সাংবাদিকরা যাতে সেখানে যেতে না পারে। কারণ আওয়ামী লীগের লোকজন ও তাদের ব্যবসায়ীরা কোন ব্যাংক থেকে কত টাকা লুটপাট করেছে এর তথ্য হয়তো বাংলা‌দেশ ব‌্যাংকে আছে। এই তথ্য সাংবাদিকরা যাতে জানতে না পারে এই জন্য তাদের ওপর বিধিনিষেধ দিয়েছে।’

‘একটি গণতান্ত্রিক দেশে সাংবাদিকদের সব জায়গায় যাওয়ার অধিকার রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের যাওয়া নিষেধ করেছে তাহলে বুঝতে হবে এই সরকার কাদের সরকার। এই সরকার লুটপাটকারীদের সরকার, বাজার সিন্ডিকেটকারীদের সরকার, ব্যাংক ডাকাতদের সরকার। যারা হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে ঋণ করে বিদেশে পাচার করেছে সে বড় বড় ঋণ খেলাপিদের প্রতিনিধি হচ্ছে এই সরকার। যারা কৃষক তাদের ৫ হাজার টাকা ঋণ মওকুফ হয় না আর যারা হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে তাদের সুদ মওকুফ হয় এবং আসল টাকা বিদেশে পাচার করে,’ বলেন রিজভী।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী বলেন, ‘আন্দোলনের প্রেরণা হচ্ছে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বিদেশে চলে যেতে পারতেন। কিন্তু জনগণকে ছেড়ে তিনি বিদেশে যাননি। আমরা বুঝতে পেরেছি শেখ হাসিনা জোর করে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দী করবে, তারপরও তিনি জনগণের জন্য দেশের বাইরে যাননি।’

ওবায়দুল কাদেরকে প্রশ্ন রাখেন রিজভী- ‘ওয়ান ইলেভেনের সময় কে আমেরিকায় পালিয়ে গিয়েছিল?’

সরকারপ্রধানকে উদ্দেশ করে রিজভী বলেন, ‘জনগণের মালিকানা ফিরিয়ে দিন। তারা যাকে ইচ্ছা তাকে ক্ষমতায় বসাবে। জনগণই ফয়সালা করবে কে ক্ষমতায় আসবে। সেটা হবে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। যিনি কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মী হবেন না। মানুষ নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে যাবে।’

প্রত্যয় ব্যক্ত করে রিজভী বলেন, ‘আমরা জানি, আমাদেরকে আবার জেলে নিয়ে যাওয়া হবে। নির্যাতন করা হবে। তারপরও আমাদের আন্দোলন থামবে না।’

দেশের জনগণ ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগকে মীরজাফর হিসেবে চিনবে বলে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, “কিয়ামত পর্যন্ত তো আর আপনারা ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না। আপনাদের যখন বিদায় হবে। তখন যে ইতিহাস লেখা হবে সেই ইতিহাসে দেশের জনগণ আপনাদেরকে মীরজাফর হিসেবে চিনবে। মীরজাফর যেমন নিগৃহীত হয়েছে আপনারা তেমন হবেন। আর বর্তমানে যারা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছে- আগামী প্রজন্ম বলবে, ‘এরাই দেশকে রক্ষা করেছে। অন্য দেশের আগ্রাসন থেকে রক্ষা করেছে।’ এদেরকে স্বাধীনতা রক্ষাকারী হিসেবে চিনবে জনগণ।”

এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক মুজতবা জামান, আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার, দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত এ বি এম এ আব্দুর রাজ্জাক, বিএনপি নেতা জাকির হোসেন, ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান আউয়াল, উত্তর বিএনপি নেতা টিপু, আফাজ উদ্দিন আফাজ, ছাত্রদলের সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম মিশু, ঢাবি ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক রাজু আহমেদ, তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইমাম হোসেন, বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রদল নেতা ডা: মুনতাসির, ডা: রাহাত ও আশরাফুল আসাদসহ নেতৃবৃন্দ।